ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ন্যায্যমূল্যের আশা নিয়ে

প্রচন্ড দাবদাহেও ক্লান্তিহীন শ্রম লবণ মাঠে চাষিরা

মহেশখালী প্রতিনিধি :: ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় উদ্যম নিয়ে কাজে চাষিরা দাবদাহেও ক্লান্তিহীন শ্রম লবণ মাঠে তপ্ত রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সাদা সোনাখ্যাত লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন মহেশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষিরা।

লবণের মৌসুম শেষ হতে আরও ১৭ দিন বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে আরও ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশের ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বাড়ার কারণের মধ্যে আছে মৌসুমজুড়ে দাবদাহ পরিস্থিতি, কম বৃষ্টিপাত এবং ৬৬ হাজার একর জমির শতভাগে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে চাষাবাদ। সনাতন পদ্ধতির তুলনায় পলিথিন প্রযুক্তিতে আড়াই গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৪ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন। অন্তত সাত থেকে আটদিন সূর্যের তাপ কিংবা রোদ পাওয়া গেলে আরও তিন থেকে চার লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন সর্বমোট ২২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদিত লবণ দিয়ে দেশের ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

বিসিকের তথ্যমতে, প্রায় ৪৫ হাজার প্রান্তিক চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ জেলার অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ২০২০ সালে যখন লবণনীতি করা হয়, তখন দেশের লোকসংখ্যা ১৮ কোটি ধরে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়। এখন আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। এক্ষেত্রে ২০ লাখ মেট্রিক টন লবণ দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে মহেশখালী উপকূলে প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। মাঠে জমানো সমুদ্রের লোনাপানি দ্রুত শুকিয়ে লবণ তৈরি হচ্ছে। গত কয়েকদিন মাঝেমধ্যে আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টি হয়নি। তবে পুরো মৌসুমজুড়ে ৩ দফা বৃষ্টিতে ১৫-২০ দিন মাঠের লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। দাবদাহে এখন জেলার ৬০ হাজার একরের বেশি জমিতে দৈনিক উৎপাদিত হচ্ছে ২২-২৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। বিসিকের কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৪৩০ টাকায়। ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে বেশ খুশি।

কালারমারছড়া চালিয়াতলীর জসিম উদ্দিন (২৫) বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহ পরিস্থিতিতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সব কৃতিত্বই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি লবণের বিষয়ে অবগত হয়েছেন বিধায় দেশে উৎপাদিত এই পণ্যের দরে গতি সঞ্চার হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে লবণের ন্যায্যমূল্য পাবেন চাষিরা।

পাঠকের মতামত: